আমি ব্লগ লেখার খুব বেশি সমর্থক কোনওদিনও ছিলাম না, সত্যি কথা বলতে কি এখনও যে আছি তা নয় । তার একটা প্রধান কারণ আমার ধারণা ব্লগ লেখার থেকেও পড়া অনেক বেশি ক্লান্তিকর । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময়ই পড়তে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠে না । নিজের ধৈর্য এবং/অথবা আগ্রহের অভাবকে 'ঠিক আছে, বাকিটা পরে পড়ব' জাতীয় অজুহাত দিয়ে ঢেকে দিই - আর আমরা সবাই জানি সেই 'পরে' টা আর কখনওই আসে না । তো, এই কারণে আমি ঠিক করেছি আমার ব্লগকে কখনওই অন্যের ক্লান্তির কারণ ঘটাব না, আমার ব্লগের বিষয় হবে প্রধানতঃ ভ্রমণ । আমার মতো যেসব বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ব্লগ হবে তথ্যের একটা উৎস । আমার নিজের একটা অভ্যেস আছে, কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, আর ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে যে ইন্টারনেটে লেখালেখি করার ব্যাপারে বাঙালিদের থেকে কুঁড়ে খুব কম শিক্ষিত জাতই আছে । আমার মতো যেসব বাঙালিরা আছে, যারা ইন্টারনেটে কোনো একটা ইংরিজীতে লেখা দেখলেই না পড়ার চেষ্টা করে, তাদের জন্য আমার ব্লগ সহায়ক হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে শুরু করছি আমার ভ্রমণকাহিনী । আগেই বলে রাখি, আমি স্ট্যাটিসটিক্সের ছাত্র ছিলাম, তাই আমার ব্লগে তত্ত্বের থেকে তথ্যের দেখাই মিলবে বেশি ।

Tuesday, January 1, 2013

কালুক ভ্রমণ


কালুক । সিকিমের পশ্চিমদিকে পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট একটা শহর । নিউ জলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) রেলস্টেশন থেকে ১১৯ কিলোমিটার দূরে এই শহর বেড়ানোর জন্য একটা বেশ নতুন জায়গা । জায়গাটার অনেকগুলো বিশেষত্ব আছে, সেগুলো লেখার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় লিখব । আপাততঃ প্রথম বিশেষত্বটা দিয়ে শুরু করি – যেটার জন্য আমি এখানে গেছিলাম । কালুক মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য বিশেষ মনোরম জায়গা !

নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার পথে - লেটে !
২৬শে ডিসেম্বর, ২০১২ বুধবার রাত ১০:০৫ এ শিয়ালদহ থেকে দার্জিলিঙ মেল ধরে আমরা এন জে পি (নিউ জলপাইগুড়ি) র উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । সঙ্গী, বলা বাহুল্য, আমার স্ত্রী অমৃতা । এ সি থ্রী টিয়ারে (উচ্চারণটা ‘টায়ার’ নয়) আমরা দু’টো আপার বার্থ নিয়েছিলাম । এ সি কামরায় রাতের বেলা এমনিতেও বাইরে কিছু দেখা যায় না তাই ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুয়ে পড়লাম । শিয়ালদহ থেকে এন জে পি র পথের বিবরণ দেওয়ার কিছু নেই, শুধু এটা বলে রাখি এইসময়ে রাস্তায় অনেক সময়ে কুয়াশা হয় তাই আমাদের ট্রেন তিনঘন্টা লেট করে বেলা এগারোটায় পৌঁছল ।

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে
এন জে পি থেকে কালুক যাওয়ার গাড়ি পাওয়া সহজ নয় কারণ আগেই বলেছি কালুক বেড়ানোর পক্ষে একটা নতুন এবং ছোট জায়গা । এখানে এখনও খুব বেশি ট্যুরিস্টরা যায় না । হানিমুনে কোনও ঝক্কি নিতে চাই না বলে আমরা আগে থেকেই হোটেলের সঙ্গে কথা বলে গাড়ি বুক করে রেখেছিলাম । এন জে পি তে ‘মারুতি অল্টো’ নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ড্রাইভার সুরেশ গুরুং । স্টেশন থেকে বেরিয়ে ড্রাইভারকে খুঁজে বের করে গাড়িতে মালপত্র তুলে আমরা যখন কালুকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম তখন ঠিক বেলা সাড়ে এগারোটা ।

তিস্তা নদী - এখন ডানদিকে
এই অঞ্চলে যারা গেছে তারা সবাই জানে যে শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যেতে হলে সেভক রোড ধরতে হয় । এই সেভক রোড ধরে সমতলে চলতে চলতে হঠাৎ একসময়ে শুরু হয়ে যায় পাহাড় আর তারপর পাহাড়ী রাস্তা ধরে তিস্তা নদীকে কখনও ডানদিকে কখনও বাঁদিকে রেখে এগিয়ে চলা । 





জওহরলাল নেহেরু ব্রীজ - গাড়ির ভেতর থেকে
জোড়থাং
এইভাবে চলতে চলতে একসময়ে একটা ব্রীজ পড়ে যেটা পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমানায় । ব্রীজটার নাম ‘জওহরলাল নেহেরু ব্রীজ’ আর জায়গাটার নাম মেল্লি । মেল্লি শহরটার বৈশিষ্ট্য হল এটা পশ্চিমবঙ্গ আর সিকিম দুটো রাজ্যের মধ্যেই পড়ে ।






মেল্লি পেরিয়ে আমরা আরও এগিয়ে চললাম । দুপুর আড়াইটে নাগাদ পৌঁছলাম ‘জোড়থাং’ এ । জোড়থাং হল সিকিমের একটা বড় শহর – প্রধান বানিজ্যকেন্দ্রও বলা যেতে পারে । জোড়থাং থেকে সিকিমের প্রায় সব জায়গার যাওয়া যায় । এখানে আমরা লাঞ্চ করার জন্য দাঁড়ালাম । একটা মোটামুটি চলনসই রেস্টুরেন্টে দু’প্লেট মিক্সড্‌ চাউমিন নেওয়া হল । দাম পড়ল ৬০/- করে ।


এরপর আবার এগিয়ে চলা । এখন আমাদের সঙ্গী ‘রঙ্গিত’ নদী (এই নদীর নাম ছোটবেলায় ভূগোল বইতে আমরা সবাই পড়েছি – তবে এটা বড় না ছোট, সেটা আর জেনে ওঠা হয়নি) । চলতে চলতে একসময়ে দিনের আলো ফুরিয়ে এল । পশ্চিম সিকিমের রাস্তাঘাট বেশ খারাপ আর জায়গায় জায়গায় মেরামতির কাজ চলছে এইসব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আমরা যখন কালুক পোঁছলাম তখন ঘড়ি বলছে সন্ধ্যে ছ’টা ।

আমরা ছিলাম ‘ঘন্‌ডে ভিলেজ রিসর্ট’ এ । জায়গাটা কালুক বাজারে । মারুতি অল্টো ঘন্‌ডের একেবারে সামনে পর্যন্ত যায় না, শেষের মিনিট পাঁচেকের ঢালু পথটুকু হেঁটে যেতে হয় । রিসর্টের একজন লোক এসে আমাদের মালপত্র নিয়ে গেল আর আমরা গেলাম রিসেপশনে । এখানে প্রথমেই আমাদের সাদা সিল্কের কাপড় দিয়ে অভ্যর্থনা করা হল । এরপর পেপার ফর্ম্যালিটি সেরে আমরা আমাদের ঘরে চলে এলাম ।

ঘন্‌ডে ভিলেজ রিসর্ট - ঘরের ভেতর
‘ঘন্‌ডে’ র প্রধান হোটেলটা ছাড়াও পাহাড়ের ধাপে ধাপে আলাদা আলাদা কটেজ রয়েছে, তার মধ্যে ‘নর্সিং ২’ এ আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল । এই ঘরগুলো ‘সুপার ডিলাক্স’ রুম – ভাড়া ১,৮০০/- (ব্রেকফাস্ট যোগ করলে ভাড়া ২,১০০/-) । এর সঙ্গে যোগ হবে ১০% সার্ভিস ট্যাক্স । ঘরে চা বা কফি দেওয়া হয় না, তবে চা-কফি-দুধ-চিনির একগুচ্ছ ছোট ছোট প্যাকেট দিয়ে যায় আর এর সঙ্গে ঘরে একটা ইলেক্‌ট্রিক কেটলি আছে যাতে ইচ্ছে হলে চা বা কফি তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে । ঘরে রুম হিটার নেই, অবশ্য তার দরকার আছে বলে আমার মনেও হয় না । বাথরুমে গিজার আছে যেটা যেকোনও সময়েই চালানো যেতে পারে । আর রয়েছে ২৪ ঘন্টার রুম সার্ভিস (যদিও মাঝরাতে সার্ভিস পাওয়া যায় কিনা আমরা সেটা দেখার কখনও চেষ্টা করিনি !) ।

হোটেলে পৌঁছে জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । কিছুক্ষণের মধ্যে রাতের ডিনারের অর্ডার দিলাম । এদের একটা ৬ – ৭ পৃষ্ঠার বিশাল মেনু কার্ড আছে যাতে ইন্ডিয়ান-চাইনিজ-কন্টিনেন্টাল সবরকমের খাবার পাওয়া যায় । আমরা আশা করিনি যে সেই মেনুর সব খাবার এরা সাপ্লাই দিতে পারে তাই রুম সার্ভিসের ছেলেটি যখন বলল – “আপ কোই ভী আইটেম অর্ডার কর্‌ সক্‌তে হ্যাঁয়” তখন কিছুটা অবাকই হলাম ।

চাঁদের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা
ঘন্‌ডের প্রায় সবক’টা ঘরের ভেতর থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় । আমরা যেদিন পৌঁছেছি, তার আশেপাশে কোনও একদিন পুর্ণিমা ছিল আর আকাশ পরিষ্কার থাকার জন্য চাঁদের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল । দৃশ্যতই অত্যন্ত সুন্দর ।






ডিনার ডাইনিং হলেও করা যায় আবার ঘরেও আনিয়ে খাওয়া যেতে পারে । আমরা দ্বিতীয়টাই করলাম কারণ আমাদের কটেজ থেকে ডাইনিং হলটা হেঁটে বেশ কিছুটা দূরে আর এই পথটা বেশ ঠান্ডা । প্রথমদিন রাতে খাওয়া হল – বাটার রুটি, টিবেটিয়ান নান আর চিকেন দো-পিঁয়াজা । সব মিলিয়ে খরচ হল ২৪২/- (১০% সার্ভিস ট্যাক্স যোগ করে) এরপর ... কালুকে প্রথম রাত্রিযাপন !

কাঞ্চনজঙ্ঘা - পরেরদিন সকালে
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২, শুক্রবার – কালুকে আমাদের সাইট-সিয়িং প্রথম এর দিন । সকালে হোটেলে ব্রেকফাস্ট করলাম চানা-বাটোরা দিয়ে । খরচ ১৩২/- । ব্রেকফাস্ট দিতে একটু বেশি দেরি করে ফেলায় আমাদের বেরোতে বেরোতে প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেল । গাড়ি বলাই ছিল – আমরা কালুকে যতদিন ছিলাম প্রত্যেকদিনই গেছি সুরেশ গুরুং - এর গাড়িতে । লোকটির কথাবার্তা বেশ ভালো এবং গাড়ি চালানোর হাত খুব ভালো । আমাদের গন্তব্যের মধ্যে আছে – ছায়াতাল, সিংশোর ব্রীজ, চাঙ্গে ফল্‌স্‌, পেলিং, পেমিয়াংচি মনাস্ট্রী আর রাবডেংস্‌ রুইন্‌স । এই জায়গাগুলোয় কালুকের চেয়ে ঠান্ডা বেশি তাই আমরা সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়েছিলাম । সাড়ে দশটায় বেরিয়ে আমাদের প্রথম গন্তব্য ‘ছায়াতাল’ এ পৌঁছলাম তখন বেলা এগারোটা কুড়ি ।

ছায়াতাল
ছায়াতাল হচ্ছে একটা হ্রদ । এখানে একটা হোটেলও আছে আর হোটেলের সামনে বসে থাকা একটা বাঙালি পরিবারকেও দেখলাম । ছায়াতালে আর কিছু দেখার নেই, মিনিট পনেরো ঘুরে ছবিটবি তুলে আমরা রওনা দিলাম আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্যে ।






সিংশোর ব্রীজ
সিংশোর ব্রীজ
এরপর ‘সিংশোর ব্রীজ' । পৌঁছলাম তখন বারোটা পঞ্চান্ন । সিংশোর ব্রীজ হচ্ছে সিকিমের সর্বোচ্চ ব্রীজ আর এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ । ব্রীজের মাঝখান থেকে একটা পাথর ফেললে নীচে পড়তে তিন মিনিট সময় লাগে বলে একটা গুজব শুনেছিলাম, কিন্তু সেটা একটা বাজে কথা (H = ½ gt2 ফর্মূলা অনুযায়ী ৩ মিনিটে একটা পাথর ওপর থেকে ১,৫৮,৯২২ মিটার বা ১৫৮ কিলোমিটার পড়তে পারে, যা মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও অনেক উঁচু !)আমি একটা পাথর ফেলে দেখলাম সেটা পড়তে দশ সেকেন্ড মতো লাগল । যাই হোক, ব্রীজটা খুবই সুন্দর – আমরা হেঁটে এপার থেকে ওপারে গেলাম । আমাদের গাড়ি ফাঁকা অবস্থায় ওপারে গেল আর ফেরার সময়ে আমাদের নিয়ে পেরোলো । এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত চমৎকার !




পেলিং
এরপর পেলিং । আমাদের যাওয়ার পথে চাঙ্গে ফল্‌স্‌ পড়ল কিন্তু ড্রাইভার বলল সেটা আমরা ফেরার সময়ে দেখব । পেলিং এ পৌঁছলাম তখন দুপুর দু’টো । এখানে আমাদের দুপুরের খাওয়ার কথা ছিল – একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করলাম । ভাত, ডাল, তরকারি, মুরগী মিলিয়ে দু’জনের মোট ১৭০/- পড়ল ।



রাবডেংস্‌ রুইন্‌স যাওয়ার পথ
এইরকম সাইনবোর্ড পরপর আছে
রাবডেংস্‌ রুইন্‌স

আমরা পেলিং শহরে আলাদা করে আর কিছু দেখিনি – খাওয়াদাওয়া শেষ করে প্রথমে গেলাম ‘রাবডেংস্‌ রুইন্‌স’ । পৌঁছলাম তখন দু’টো চল্লিশ । এখানে গেটের কাছে গাড়ি রেখে বাকিটা হেঁটে যেতে হয় । গেট থেকে বাঁধানো পাহাড়ি পথে প্রায় এক কিলোমিটার । এটাকে একটা ছোটখাটো ট্রেকিং বলা যেতে পারে । হাঁটতে হাঁটতে একসময়ে দেখলাম একটা সাইনবোর্ডে লেখা আছে KEEP UP THE SPIRIT. THE DAY IS YOURS. 450 METER. অস্বীকার করব না, হাঁটাটা কিছুটা বিরক্তিকরই । সেটা সম্ভবতঃ সবারই হয় বোধহয় সেই জন্যই লোকজনকে উৎসাহিত করার জন্য জায়গায় জায়গায় সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে । আরেকটু এগিয়ে দেখলাম একটা ২৫০ মিটারের বোর্ড রয়েছে । এরপর - DO NOT GET TIRED. GREAT EXCITEMENT IS AWAITING. 200 METER. এরপর পাশের সাইনবোর্ডটা । 



আর তারপর – হ্যাঁ, এটাই আমাদের গন্তব্য - রাবডেংস্‌ রুইন্‌স । এখানে একসময়ে সিকিমের রাজধানী ছিল । এটাকে রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ বলা যেতে পারে । জায়গাটা একটা পাহাড়ের মাথায়, এখান থেকে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায় । এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে ।





পেমিয়াংচি মনাস্ট্রী
রাবডেংস্‌ রুইন্‌স দেখে বেরোতে বেরোতে সোয়া একঘন্টা লেগে গেল । এরপর গেলাম ‘পেমিয়াংচি মনাস্ট্রী’ । পৌঁছলাম চারটে । এটা একটা বেশ বড় মনাস্ট্রী এবং বেশ সুন্দর । এখানে ঢুকতে একটা মেইন্টেনেন্স ফি বাবদ মাথাপিছু ২০/- করে দিতে হয় । মনাস্ট্রীর ভেতরে ঢুকে দোতলা এবং তিনতলায় যাওয়া যায় । তিনতলার মেঝেটা পুরোটাই কাঠের । ভেতরে পুরনোদিনের নানারকম জিনিস আছে ।
চাঙ্গে ফল্‌স্‌
এরপর ফেরার পথ ধরলাম । পথে পড়ল ‘চাঙ্গে ফল্‌স্‌’ । অনেকটা উঁচু থেকে পড়ে অনেকটা নিচে চলে যায় – এটাই এই ফল্‌সের বৈশিষ্ট্য । এখানে যখন আমরা পৌঁছলাম তখন প্রায় বিকেল পাঁচটা আর সন্ধ্যে হব হব করছে । এখানে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছবি তুলে আমরা কালুক ফেরার পথ ধরলাম । ফেরার পথে একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল । এইসময়ে বেশ ঠান্ডা লাগছিল – আমাদের সঙ্গে নিয়ে বেরনো অতিরিক্ত গরম পোষাকগুলোর সদ্ব্যবহার করলাম । কালুকে পৌঁছলাম তখন প্রায় সাতটা । আমাদের প্রথমদিন ঘোরার খরচ ২,৫০০/- । ঘরে পৌঁছে ডিনারের অর্ডার দিয়ে দিলাম । রুটি আর চিকেন বাটার মশালা মিলিয়ে মোট ২৪৪/- পড়ল ।



পরেরদিন ২৯শে ডিসেম্বর, ২০১২, শনিবারআমাদের গন্তব্য সাউথ সিকিম । দেখার জায়গা – স্যামড্রুপসে, নামচি রক্‌ গার্ডেন, নামচি আর চারধাম । নামচি কালুক থেকে অনেকটা দূরে তাই আমাদের ড্রাইভার বলে রেখেছিল যেন সকাল আটটায় বেরোই । আমরা সকালে আর রিসর্টের ব্রেকফাস্ট না নিয়ে নিজেদের আনা খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম । আমাদের সঙ্গে প্রচুর বিস্কুট, চকোলেট, চানাচুর ইত্যাদি ছিল – তাই খিদেয় পেট চুঁই চুঁই ব্যাপারটা কখনও হয়নি ।

স্যামড্রুপসের ১৩৫ ফুট উঁচু মূর্তি
সবকটা জায়গাই নামচিতে, বা নামচির কাছাকাছি । কালুক থেকে নামচি যেতে গেলে জোড়থাং হয়ে যেতে হয় । প্রথম গন্তব্য ‘স্যামড্রুপসে’তে পৌঁছলাম তখন বেলা এগারোটা পনেরো । জায়গাটার উচ্চতা ৭,০০৯ ফুট । এখানে ঢোকার জন্য টিকিট লাগে, মাথাপিছু ২০/- । এছাড়া গাড়ি পার্কিং এর জন্য ২০/- । স্যামড্রুপসের কোনও ঐতিহাসিক মূল্য নেই এখানে ‘গুরু পদ্মসম্ভব’ এর একটা ১৩৫ ফুট উঁচু মূর্তি আছে । ১৯৯৭ সালে এই জায়গাটা তৈরি হয়েছে । চত্বরটা ঘুরে বেড়ানোর পক্ষে বেশ সুন্দর আর ওপর থেকে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায় । উঁচু জায়গা থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্যের যে সৌন্দর্য্য সেটাই স্যামড্রুপসের বৈশিষ্ট্য । 
স্যামড্রুপসে থেকে নামচি শহর
জপযন্ত্র


















এখানকার একটা দোকান থেকে দু’টো তিব্বতী জপযন্ত্র কেনা হল । দাম নিল ১০০/- করে ।





নামচি রক গার্ডেন





স্যামড্রুপসের পর ‘নামচি রক্‌ গার্ডেন’ । পাহাড়ী পথে হেঁটে নামতে নামতে পথের দু’ধারে নানারকম সুন্দর গাছ । এই জায়গাটা আমাদের কিছুটা হতাশ করল । কারণ এখানকার গাছপালাগুলো ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না । জায়গাটা দেখতে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয় সেটার পক্ষে সৌন্দর্য্যটা যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয় ।



এরপর এলাম নামচি শহরে । তখন বাজে দুপুর একটার কিছু বেশি । এখানে আমাদের একটা হোটেলের সামনে নামিয়ে ড্রাইভার একটু এগিয়ে গিয়ে গাড়িটা পার্ক করল । আমরা এই হোটেলে দু’টো চিকেন থালি নিলাম । খরচ হল ১৮০/- ।

নামচি সেন্ট্রাল পার্ক - বিদেশী লোকেশনের মতো
এরপর আমরা কিছুক্ষণ নামচি শহরটা দেখলাম । আমরা ছিলাম ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ এ যেটা অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরি করা । বাংলা বা হিন্দী ছবিতে যেরকম ফরেন লোকেশন দেখা যায়, নামচির সিটি সেন্টারে গেলে ঠিক সেরকমই দেখতে পাওয়া যায় । এখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ছবি তুলে আমরা হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম আমাদের গাড়ির কাছে ।


বদ্রীনাথ ধাম
‘চারধাম’ । আমাদের চতুর্থ তথা শেষ গন্তব্য । পৌঁছলাম তখন পৌনে তিনটে । এখানে কিছু পয়সা খরচের ব্যাপার আছে – প্রথমে গাড়ি পার্কিং এর খরচ ৫০/-, তারপর ক্যামেরা নিয়ে ভেতরে ঢোকার খরচ ৩০/- (মুভি ক্যামেরা হলে ৫০/-) । এছাড়া ভেতরে ঢুকে জুতো রাখার খরচ মাথাপিছু ২/- করে 

(বাঁদিক থেকে) জগন্নাথ ধাম, রামেশ্বরম্‌ ধাম আর দ্বারকা ধাম




চারধাম হচ্ছে ভারতের বিখ্যাত চারটে জায়গার একটা সংক্ষিপ্ত চেহারা । এই চারটে জায়গা হল ‘বদ্রীনাথ ধাম’, ‘দ্বারকা ধাম’, ‘জগন্নাথ ধাম’ আর ‘রামেশ্বরম্‌ ধাম’ । চারটে বিখ্যাত মন্দিরের চারটে ছোট সংস্করণ করে এখানে রাখা হয়েছে ।
দ্বাদশ শিব মন্দিরের দু'টো





এদের সবার ওপরে আছে শিবের বিশাল মূর্তি এবং মন্দির আর সেইসঙ্গে দ্বাদশ শিবমন্দিরও আছে । আর আছে সাঁইবাবার (গেরুয়াধারী সাঁইবাবা নয়) মন্দির । এই জায়গাটারও কোনও ঐতিহাসিক মূল্য নেই । জায়গাটা বিশাল তবে বেশ সুন্দরভাবে সাজানো এবং যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় । সর্বোপরি এই চারটে জায়গার আসলগুলো যেরকম নোংরা, তাদের প্রতিরূপ এই জায়গাটা সেরকম একেবারেই নয় ।

বিশালাকৃতিক্স শিব














চারধাম থেকে বেরোলাম তখন পৌনে চারটে । আমাদের আর কিছু দেখার নেই কাজেই আমরা ফেরার পথ ধরলাম । জোড়থাং হয়ে কালুক পৌঁছলাম প্রায় সাড়ে ছ’টা । দ্বিতীয়দিন ঘোরার খরচ ৩,০০০/- । পরেরদিন আমাদের আর দূরে কোথাও যাওয়ার নেই, কালুকে লোকাল সাইট-সিয়িং করব । এটা করতে ঘন্টাখানেকের বেশি লাগবে না তাই ড্রাইভার বলল দুপুর দেড়টায় আসবে । আমরা লাঞ্চ করে বেড়াতে বেরোব । রাতে ডিনারে ভেজ চাউমিন আর চিলি ফিশ অর্ডার দেওয়া হল ২৯০/- ।

ঘন্‌ডে ভিলেজ রিসর্টের কটেজ
ঘন্‌ডে ভিলেজ রিসর্টের কটেজ
পরেরদিন, ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১২ রবিবার সকালে একটু দেরি করে উঠলাম । ব্রেকফাস্ট নেওয়া হল – ১০০/- করে চিকেন স্যান্ডউইচ । এরপর রিসর্টটা ভালো করে ঘুরে দেখলাম । এ’কদিন সকালে বেরিয়ে গেছি, অন্ধকার হওয়ার পরে ফিরেছি কাজেই রিসর্টটা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়নি । পাহাড়ের ধাপে ধাপে রিসর্টের বিভিন্ন কটেজগুলো ঘুরে টুরে দেখলাম



দুপুরে ভাত, আলুর দম আর চিকেন লোকাল স্টাইল নেওয়া হল । খরচ পড়ল ২৪২/- ।











রিনচেনপং মনাস্ট্রী
দুপুরে পৌনে দু’টোর সময়ে বেরোলাম লোকাল সাইট-সিয়িং করতে । প্রথমে গেলাম ‘রিনচেনপং মনাস্ট্রী’তে । এটা কালুক থেকে মিনিট পনেরো লাগে । জায়গাটা খুব একটা ঘ্যাম কিছু নয় আর সেই জন্যই বোধহয় একটা স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য আছে । আমরা যখন গেলাম তখন প্রার্থনা চলছিল, ফলে আমাদের আর ভেতরে ঢোকা সম্ভব হল না । মনাস্ট্রীর সামনে একটা বিশাল ফাঁকা মাঠ আছে যেখানে দুপুরের রোদে হাঁটতে বেশ ভালো লাগে ।

ওল্ড ব্রিটিশ বাংলো
এরপর গেলাম ‘ওল্ড ব্রিটিশ বাংলো’য় । নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে জায়গাটা আসলে কি, তাই আর আলাদা করে বলছি না যে এটা আসলে ব্রিটিশদের একটা পুরনো বাংলো । বাংলো যেরকম হয়, একটা একতলা বাড়ি, মাথায় তেকোনা ছাদ, সামনে লম্বা বারান্দা আর তার সামনে মোরামের রাস্তার দু’দিকে ফুলগাছ – এ’সবই আছে । বাংলোর পেছনে চাকরবাকরদের থাকার ঘরও আছে । এখানে আমরা ছাড়া আর কোনও লোকজন ছিল না, মিনিট পনেরো ঘুরে আবার গাড়িতে উঠে পড়লাম ।

ব্রিটিশ বাংলোর রাস্তাতে পড়ে ‘পয়জন লেক’ । এই লেকে এখন জল নেই, শুধু বর্ষাকালে এখানে জল থাকে । ব্রিটিশদের সঙ্গে নেপালীদের যুদ্ধের সময়ে নেপালীরা এই লেকের জলে বিষ গাছের পাতা মিশিয়ে ব্রিটিশদের হত্যা করে – সেই থেকে পয়জন লেক । আমরা পাহাড়ের ওপরের রাস্তা থেকে নিচে লেকটা দেখলাম, তবে লেকের কাছে আর যাইনি ।

'রবীন্দ্র স্মৃতি ভবন' নামক জায়গা থেকে পাহাড়ের দৃশ্য
এরপর আজকের এবং আমাদের বেড়ানোর শেষ দ্রষ্টব্য – ‘রবীন্দ্র স্মৃতি ভবন’ । এই জায়গাটার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কি সম্পর্ক বুঝলাম না, একটা পায়ে চলা পথে মিনিট পাঁচেক চলার পর একটা ভাঙাচোরা বসার জায়গা । এখান থেকে অন্যান্য পাহাড়ের ঢেউ খুব সুন্দর দেখা যায় কিন্তু ওই পর্যন্তই । জায়গাটার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক আছে এরকম কোনও প্রত্যাশা নিয়ে গেলে হতাশ হতে হবে, তবে দেখার জায়গা হিসেবে চলনসই ।

মন্দিরের সামনে থেকে কালুক শহর
ড্রাইভার আমাদের কালুক বাজারে ছেড়ে দিল লোকাল সাইট-সিয়িং এর জন্য লাগল ৬০০/- । দুপুর তিনটে বাজে, এক্ষুণি রিসর্টে ফেরার মানে হয় না, সেই জন্য আমরা আশপাশটা একটু হাঁটলাম । কালুক বাজারে ওই এলাকার একটা ম্যাপ আছে, সেটায় কোন জায়গা কতদূরে এসব লেখা আছে । সেই ম্যাপ দেখেই জানতে পারলাম ঠিক বাজারের ওপরেই পাহাড়ের ওপর একটা শিবের মন্দির আছে । সিঁড়ি দিয়ে সেই মন্দিরে উঠতে হয় । এখান থেকে পুরো কালুক শহরটা দেখা যায় । মন্দিরটা দেখার সেরকম কিছু না থাকলেও এখানকার দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম । কালুকে গিয়ে এই জায়গাটা একবার না গেলে সত্যিই কিছু না দেখা থেকে যাবে ।

পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে এসে আমরা কিছু দোকানপাট দেখলাম । পুরো কালুক বাজারে সবমিলিয়ে  বোধহয় ২৫ – ৩০ টা দোকান আছে, যার মধ্যে অন্ততঃ ৫ টা মদের দোকান । বাকি দোকানগুলোয় মাছমাংস, মনিহারি, মুদির জিনিস পাওয়া যায় । আমাদের কিছু উপহার দেওয়ার মতো জিনিস কেনার ছিল – কিন্তু ওখানে সেরকম দোকান নেই বললেই চলে । ঢাকনা দেওয়া চিনামাটির নক্সা করা কাপ পাওয়া যায় (যেগুলোর দাম ৪০/- করে) কিন্তু সেগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে । অনেক খুঁজে আমাদের রিসর্টের রাস্তার সামনের একটা দোকান থেকে কিছু জিনিস কেনা হল । হয়তো প্রতিযোগিতা নেই বলেই এখানে জিনিস পত্রের দাম একেবারেই কমাতে চায় না । সবমিলিয়ে আমাদের ৫৮০/- হল যা অনেক দরদাম করেও ৫৬০/- নিচে নামানো গেল না ।

দ্য লাস্ট সাপার অ্যাট কালুক
রিসর্টে ফিরে এলাম । এটাই আমাদের কালুকে শেষ রাত্রি – পরেরদিন সকালে আমাদের এন জে পি র জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে । সন্ধ্যেবেলা যাবতীয় গোছগাছ সেরে নিলাম । ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে সব টাকা পয়সাও মিটিয়ে দিলাম গাড়ির জন্য আমাদের মোট দিতে হল ১২,০০০/- (এন জে পি থেকে কালুক ৩,০০০ + পেলিং এর দিকের সাইট-সিয়িং ২,৫০০ + নামচির দিকের সাইট-সিয়িং ৩,০০০ + লোকাল সাইট-সিয়িং ৬০০ + কালুক থেকে এন জে পি ৩,০০০ - ছাড় ১০০) । আমরা সাধারণতঃ শেষদিনের ডিনারটা একটু ভালো কিছু করি, তাই মিক্সড্‌ ফ্রাইড রাইস আর চিকেন মাঞ্চুরিয়ান অর্ডার দেওয়া হল । খরচ পড়ল ৩০৮/- ।

এই গাড়ি করেই ঘুরেছিলাম
৩১শে ডিসেম্বর, সোমবার আমাদের ফেরার ট্রেন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের এন জে পি থেকে ছাড়ার সময় বিকেল ৫:৪০, কিন্তু ড্রাইভার বলল রাস্তায় অনেক জায়গায় কাজ হচ্ছে আর বিভিন্ন জায়গায় যানজট হচ্ছে – তাই ঝুঁকি নিয়ে দেরি করে বেরনো ঠিক হবে না । তাই পরেরদিন সকালে ঠিক আটটার সময়ে আমরা নিজেদের আনা খাবার দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম কালুক থেকে । বেরনোর সময়েও আরেকদফা সিল্কের কাপড় দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হল । কাঞ্চনজঙ্ঘাকে একবার শেষবারের মতো অভিবাদন করে গাড়িতে উঠে পড়লাম ।

এন জে পি স্টেশনে - ফেরার পথে
জোড়থাং পৌঁছলাম সকাল দশটায় । এখানে দাঁড়ানোর কোনও দরকার নেই, তাই আরও এগিয়ে চললাম । রাস্তায় সেরকম দাঁড়াতে কোথাও হয়নি, দাঁড়াতে হল সেভক এর কাছে পৌঁছে – এখানে রাস্তায় বেশ যানজট হয় । পাহাড় থেকে সমতলে নেমেও যানজট অব্যাহত রইল । ড্রাইভার সুরেশ গুরুং যখন আমাদের এন জে পি তে নামাল, তখন দুপুর আড়াইটে ।



আমরা স্টেশনের লাগোয়া ভাতের হোটেলে দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম । ‘মটন ভাত’ (হ্যাঁ, এইসব হোটেলে মাটন লেখা থাকে না সাধারণতঃ!) ৮০/- করে । খেয়েদেয়ে ওয়েটিং রুমে এসে বসে রইলাম । সন্ধ্যে ছ’টা নাগার ট্রেন এল । মাঝরাতে ট্রেনের মধ্যেই আমরা New Year celebrate করলাম ফেরার ট্রেন অবশ্য মাত্র ৪৫ মিনিট লেট ছিল – তাও সেটা দমদম আর শিয়ালদহের জঘন্য সিগন্যালিং ব্যবস্থার জন্য । ১লা জানুয়ারি, ২০১৩ মঙ্গলবার সকালে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আমরা যখন ট্যাক্সিতে উঠলাম তখন সবে ছ’টা বেজেছে ।

সারসংক্ষেপঃ

. ‘অনুস্বর’ বাদ দিয়ে সিকিমের যে মাত্র কয়েকটা জায়গা আছে, কালুক তার মধ্যে একটা । কালুক শহরটা বেশ ছোট – মধুচন্দ্রিমার পক্ষে বিশেষ সুন্দর ।
. নিউ জলপাইগুড়ি (শিলিগুড়ি) স্টেশন থেকে কালুকের দুরত্ব ১১৯ কিলোমিটার । এন জে পি থেকে গাড়ির ব্যবস্থা আছে – কালুক যেতে মোটামুটি পাঁচ – সাড়ে পাঁচ ঘন্টা লাগে । ছোট গাড়ির ভাড়া ৩,০০০ টাকা । বড় গাড়ির ভাড়া ৩,৫০০ টাকা ।
. কালুকে কিছু হোটেল আছে আর আছে কিছু রিসর্ট । এদের মধ্যে ঘন্‌ডে, রিনচেনপং আর ম্যান্ডারিন উল্লেখযোগ্য । আমরা ছিলাম ঘন্‌ডে রিসর্টে যার ওয়েবসাইট হল : http://www.ghondayresort.com/
. কালুকের প্রায় সব জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় । রিসর্টের ঘরের ভেতর থেকেও দেখা যায় ।
৫. কালুক থেকে সাইট-সিয়িং এর জন্য প্রধানতঃ দু'দিকে যাওয়া যায় - উত্তর-পশ্চিম আর দক্ষিণ । উত্তর-পশ্চিমে পেলিং এর দিকে কিছু দেখার জায়গা আছে - ছোটগাড়ির ভাড়া পড়ে ২,৫০০ টাকা । দক্ষিণে নামচির দিকে যেতে পড়ে ৩,০০০ টাকা ।
৬. এগুলো বাদ দিয়ে লোকাল সাইট-সিয়িং আছে যেটা দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া না করে লোকাল গাড়িতেও ঘোরা যেতে পারে । গাড়ি ভাড়া করলে ৬০০ টাকা মতো পড়বে ।
৭. কালুকে ঘোরাঘুরি করার জন্য ড্রাইভার সুরেশ গুরুং এর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে - ড্রাইভারের সঙ্গে সরাসরি কথা বললে গাড়িভাড়া কিছুটা কম করা যায় । সুরেশ গুরুং এর মোবাইল নম্বর - ৯৬৪৭৮৫৬১৯৫ ।
৮. কালুকে কেনাকাটার জন্য দোকানপাট নেই বললেই চলে - মাত্র একটা-দু'টো দোকানেই কিনে নিয়ে আসার মতো কিছু পাওয়া যায় ।

উপসংহারঃ


কাঞ্চনজঙ্ঘা
মধুচন্দ্রিমা যাপনের জন্য কালুক একটা খুব সুন্দর জায়গা - কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাছাড়া এখানে যাওয়ার মানে হয় না । জায়গাটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা, তাই যারা বেশি লোকজনের ভীড় পছন্দ করে না, তাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় । দার্জিলিঙ, গ্যাংটক, কার্সিয়ং, কালিম্পং আর পেলিং এ যারা যেতে চায় না, তাদের পক্ষেও কালুক একটা ভালো দেখার জায়গা । এখানে তিনদিনের বেশি থাকার কোনও মানে হয় না, কারণ তাহলে হোটেলে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না । হয়তো ধীরে ধীরে কালুকও ট্যুরিস্টদের ভীড়ে একসময়ে ঘিঞ্জি হয়ে যাবে - তখন আর এখনকার মতো মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করা যাবে না । কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে সিকিমের আরেকটা শহর দার্জিলিঙ বা গ্যাংটক হয়ে ওঠার আগে একবার কালুক ভ্রমণ করে আসাই ভালো !


কালুক ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here: