আমি ব্লগ লেখার খুব বেশি সমর্থক কোনওদিনও ছিলাম না, সত্যি কথা বলতে কি এখনও যে আছি তা নয় । তার একটা প্রধান কারণ আমার ধারণা ব্লগ লেখার থেকেও পড়া অনেক বেশি ক্লান্তিকর । অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অনেক সময়ই পড়তে শুরু করে শেষ করা হয়ে ওঠে না । নিজের ধৈর্য এবং/অথবা আগ্রহের অভাবকে 'ঠিক আছে, বাকিটা পরে পড়ব' জাতীয় অজুহাত দিয়ে ঢেকে দিই - আর আমরা সবাই জানি সেই 'পরে' টা আর কখনওই আসে না । তো, এই কারণে আমি ঠিক করেছি আমার ব্লগকে কখনওই অন্যের ক্লান্তির কারণ ঘটাব না, আমার ব্লগের বিষয় হবে প্রধানতঃ ভ্রমণ । আমার মতো যেসব বাঙালিরা ঘুরতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমার ব্লগ হবে তথ্যের একটা উৎস । আমার নিজের একটা অভ্যেস আছে, কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে সেই জায়গাটা সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, আর ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে আমার বরাবরই মনে হয়েছে যে ইন্টারনেটে লেখালেখি করার ব্যাপারে বাঙালিদের থেকে কুঁড়ে খুব কম শিক্ষিত জাতই আছে । আমার মতো যেসব বাঙালিরা আছে, যারা ইন্টারনেটে কোনো একটা ইংরিজীতে লেখা দেখলেই না পড়ার চেষ্টা করে, তাদের জন্য আমার ব্লগ সহায়ক হবে, এই বিশ্বাস নিয়ে শুরু করছি আমার ভ্রমণকাহিনী । আগেই বলে রাখি, আমি স্ট্যাটিসটিক্সের ছাত্র ছিলাম, তাই আমার ব্লগে তত্ত্বের থেকে তথ্যের দেখাই মিলবে বেশি ।

Tuesday, October 25, 2016

তাকদা ভ্রমণ

তাকদা । নামটা শুনে প্রথমেই লোকজন জিজ্ঞেস করে "কি ? চাকদা? চাকদায় আবার বেড়াতে যাওয়ার কি আছে ?" তাদের বলতে হয় - না, এই জায়গাটার নাম তাকদা । দার্জিলিঙ জেলার ছোট্ট একটা গ্রাম । দার্জিলিঙ জেলায় 'ততটা বিখ্যাত নয়' এরকম যে বেড়ানোর জায়গাগুলো আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৫০০ ফুট উচ্চতায় আর শিলিগুড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই সুন্দর জায়গায় তিনদিনের বেড়ানো নিয়ে আমার ব্লগের এবারের পোস্ট ।

২০শে অক্টোবর, ২০১৬ বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে রাত সাড়ে আটটায় আমাদের যাত্রা শুরু - গন্তব্য নিউ জলপাইগুড়ি । কাঞ্চনকন্যার সমস্যা হল এর স্টপেজ খুব বেশি । তবে এটা সকাল সাড়ে সাতটায় নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছয় শুধুমাত্র এই কারণেই আমরা এই ট্রেনটা পছন্দ করেছিলাম ।

এটা আমাদের দরকার ছিল কারণ আমরা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে তাকদা যাওয়ার জন্য 'দার্জিলিঙ হিমালয়ান রেলওয়ে' (টয়ট্রেন) বুকিং করেছিলাম । টয়ট্রেন ছাড়ে সকাল ৮ঃ৩০ -এ । টয়ট্রেন তাকদা যায় না, ঠিক ছিল আমরা 'ঘুম' পর্যন্ত্য টয়ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে গাড়িতে তাকদা যাব । কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ভারতীয় রেল কিছুদিনের জন্য টয়ট্রেনের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে, তাই আমাদের এই কাঞ্চনকন্যায় যাওয়াটা অর্থহীন হয়ে গেল ।

কাঞ্চনকন্যা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
আমাদের এবারের দল ৩ জন শিশুসমেত ১৩ জনের । বাবা, মা, আমি, অমৃতা, কথা, কলি, আমার বড়মাসি, কঙ্কনাদি, অমিতদা, মিঙ্কা, বৈশাখী, কাকিমা আর সমীরণদা - এককথায় বলতে গেলে আমাদের নিয়মিত দলের প্রায় সবাই আর সেইসঙ্গে আমার বড়মাসি । আমাদের ট্রেন প্রথমদিকে কিছুটা দেরিতে চললেও নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে দিল প্রায় সঠিক সময়ে । ট্রেন যখন প্রায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ঢুকছে, ট্রেন থেকে দেখা গেল কাঞ্চনজঙ্ঘা । এটা আমাদের একটা খুব বড় প্রাপ্তি । আমি নিজে এই জিনিস আগে দেখে থাকলেও জানি খুব বেশি লোকের এটা দেখার সৌভাগ্য হয় না । তাকদায় আমরা যেখানে থাকব, সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোনও ভিউ নেই, তাই এখান থেকেই যা দেখার দেখে নিলাম ।

তিস্তা ব্রীজের কাছে ব্রেকফাস্ট ব্রেক
একটা ১০৫ বছরের পুরনো ব্রিটিশ হেরিটেজ বাংলো তাকদায় থাকার জন্য সুপরিচিত (এই ১০৫ সংখ্যাটা অবশ্য অনেকদিন আপডেট হয়নি !) - এছাড়া আর দু'একটা থাকার জায়গা আছে । টয়ট্রেন না থাকায় আমরা বাংলো থেকেই একটা গাড়ি বুক করে রেখেছিলাম কারণ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে তাকদা যাওয়ার গাড়ি পাওয়া সহজ নয় । স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে রওনা দিতে দিতে সাড়ে আটটা বেজে গেল । আমাদের দলে পূর্ণবয়স্ক লোকের সংখ্যা ১০ আর সবাই একটা টাটা সুমোতে (একটু হয়তো বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে কিন্তু পাহাড়ে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় । যেভাবেই হোক সবার জায়গা হয়েও গেল )। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে তাকদা হিলকার্ট রোডে হয়েও যাওয়া যায় আবার সেভক হয়েও যাওয়া যায় - আমরা দ্বিতীয়টা ধরলাম । ঘন্টাখানেক চলার পর তিস্তা ব্রীজের কাছে ব্রেকফাস্টের জন্য দাঁড়ানো হল । চিকেন চাউমিন, ভেজ মোমো, চিকেন থুকপা, ছোলে-বাটুরে এইসব দিয়ে ভালো করে ব্রেকফাস্ট করে নেওয়া হল । খরচ হল মোট ১,৪০০/- টাকা ।

তাকদায় পৌঁছনোর রাস্তার শেষের দিকটা বেশ খারাপ । গাড়িতে ১০ জন বসে এতক্ষণ একটু চাপাচাপি হচ্ছিল কিন্তু এই রাস্তায় এসে গাড়ির ভেতরে এমন 'মুড়ির টিন' ঝাঁকানি শুরু হল যে একসময়ে মনে হচ্ছিল গাড়িতে বোধহয় চাইলে আরও একজনের জায়গা হয়ে যাবে !

তাকদায় ব্রিটিশ হেরিটেজ বাংলো
তাকদা পৌঁছলাম দুপুর একটা নাগাদ । আমরা থাকার জন্য ব্রিটিশ বাংলোয় দু'টো ডাবল বেড আর দু'টো ট্রিপল বেড ঘর বুক করেছিলাম । বাংলোটা একটা L আকৃতির বাড়ি । এর একটা দিকে চারটে ব্রিটিশ আমলের ঘর । অন্যদিকে দু'টো ঘর যেগুলো পরবর্তীকালে তৈরি । ব্রিটিশ আমলের ঘরগুলোর ভেতরে ফায়ারপ্লেস আছে, চাইলে ব্যবহার করা যায় (অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে) । তাকদায় ঠান্ডা খুব বেশি নয়, দিনের বেলা সোয়েটার লাগে না আর রাত্রিবেলা ঘরের বাইরে বেরোলে একটা জাম্পার বা জ্যাকেট থাকলেই চলে । তবে এমনিতে ঠান্ডা সেরকম না লাগলেও একটা ঠান্ডা হাওয়া মাঝে মাঝে দিচ্ছিল যেটা বেশ আরামদায়ক ।

আমরা চানটান সেরে নিলাম । বাথরুমে গিজারের ব্যবস্থা আছে । এখানে আগেই আমরা দুপুরের খাবারের কথা বলে রেখেছিলাম । সেইমতো দুপুরে এরা আমাদের ভাত, ডাল, স্কোয়াশের তরকারি, ডাবল ডিমের এগ্‌কারি দিল । এই ব্রিটিশ বাংলোয় খাওয়ার জন্য মাথাপিছু প্রতিদিন ৬০০/- লাগে । এর মধ্যে পাওয়া যায় -
সকালে ঃ বেড-টি, ব্রেকফাস্ট (লুচি-তরকারী/পরোটা-তরকারী/পাঁউরুটি টোস্ট), আবার চা
দুপুরে ঃ ভাত, ডাল, তরকারী, ডাবল ডিমের এগ্‌কারি
বিকেলে ঃ চা, পপকর্ণ
রাতে ঃ ভাত/রুটি, চিকেন

বাংলোর ব্যালকনিতে - রাতের বেলায়
দুপুরে খাওয়ার পর বাংলোর লনে এসে বসলাম । এখান থেকে সামনের পাহাড়ের ভিউ চমৎকার । দলে বেশি লোকজন থাকার সুবিধে হচ্ছে স্রেফ আড্ডা মেরে সময় কেটে যায় । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, আমাদের বাংলোর পিছনের পাহাড়ের ওপরে একসময়ে সূর্য্যাস্ত হয়ে গেল । এইসময়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য সত্যিই অসাধারণ । আশেপাশের পাহাড়গুলোর ওপর ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসার দৃশ্য দেখতে দেখতে কিভাবে যেন সময় কেটে যায় । একসময়ে সেইসব পাহাড়গুলোর ওপরের জনবসতিগুলোয় একটু একটু করে আলো জ্বলে উঠল । আমরা বাংলোর ব্যালকনিতে বসে সন্ধ্যের চা খেলাম আর আড্ডা চলতেই থাকল । শতাধিক পুরনো ব্রিটিশ বাংলোয় কোনও ভূতের গল্প আছে কিনা জানি না তাই আমরা নিজেরাই কিছু তৈরি করে নিলাম (ভেবেছিলাম ভূত নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো তাদের দেখা মিললেও মিলতে পারে, কিন্তু সে গুড়ে বালি !) । রাত্রি ন'টা নাগাদ খাওয়ার ঘরের ডাকে সাড়া দিয়ে দেখলাম আমাদের জন্য রুটি আর চিকেন কারি রেডি ।

পরেরদিন ২২শে অক্টোবর, ২০১৬ শনিবার । তাকদায় প্রকৃতপক্ষে দেখার খুব বেশি কিছু নেই, আমাদের বাংলোর ম্যানেজার তাই আগেই বলে রেখেছিলেন কালিম্পং-এর দিকটা যাওয়ার জন্য । সেইমতো সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ আমরা বেরোলাম । ঘন্টাখানেক যাওয়ার পর পড়ল আমাদের প্রথম গন্তব্য - 'তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট' ।

তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে ভিউ
তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে অনেকগুলো পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায় । এখানে একটা ছোট টাওয়ার গোছের আছে, তার ওপরে বসার জায়গাও আছে । এখানে ওঠার জন্য অল্প কয়েকটা সিঁড়ি ভাঙ্গতে হয় আর সেটা করা সার্থক । আমরা ভিউপয়েন্ট থেকে বেশি কিছু ছবি তুললাম । এখানে সবমিলিয়ে মিনিট পনেরো থাকার পর এগিয়ে চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য 'ছোটামাঙ্গয়া অরেঞ্জ গার্ডেন'-এর দিকে ।

অরেঞ্জ গার্ডেন
তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে অরেঞ্জ গার্ডেন আরও ৪৫ মিনিট মতো লাগল । দূরত্ব খুব বেশি না, তবে রাস্তা খারাপ হওয়ায় সময় লাগে । অরেঞ্জ গার্ডেনে ঢুকতে মাথাপিছু ৩০/- টাকা করে টিকিট লাগে । পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে এখানে কমলালেবুর চাষ করা হয়, তবে কমলালেবু ছাড়াও বাগানে আরও অনেক গাছ আছে (কি কি গাছ তখন জেনেছিলাম, এখন আর সেভাবে মনে নেই) । একটা বাঁশগাছ দেখলাম, সেটা হচ্ছে জাপানি বাঁশ গাছ । এর বৈশিষ্ট্য হল এর গা ভীষণ মসৃণ । এছাড়া বাগানটার মধ্যে দিয়ে একটা ছোট ঝর্ণা নেমে গেছে সেটাও খুব সুন্দর । সম্পূর্ণভাবে মানুষের হাতের তৈরি হলেও বাগানটায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য স্পষ্ট ।

অরেঞ্জ গার্ডেনের ভেতরে একটা ফ্যাক্টরি আছে, এখানে অরেঞ্জ জুস, অরেঞ্জ স্কোয়াশ তৈরি হয় । এখানে বিক্রির ব্যবস্থাও আছে । আমরা সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ বসলাম । এখানে অরেঞ্জ জুস, স্কোয়াশ ছাড়াও লঙ্কা ইত্যাদি পাওয়া যায় । আমরা অবশ্য কিছু কিনিনি । বাগান থেকে বেরিয়ে এসে আমরা রওনা দিলাম কালিম্পং এর দিকে ।

কালিম্পং শহর
ছোটামাঙ্গয়া থেকে কালিম্পং পৌঁছতে আরও একঘন্টা মতো লাগল । কালিম্পং দার্জিলিঙ-এর মতো একটা হিলস্টেশন - অনেক পুরনো । এখানকার রাস্তাঘাট, দোকানপাট একেবারেই দার্জিলিঙ এর মতো, ভীড়ও দার্জিলিঙ-এর মতো । আমাদের প্ল্যানে কালিম্পং-এ সেভাবে দেখার কিছু ছিলনা, এখানে আমরা থামলাম লাঞ্চের জন্য । কালিম্পং-এ বাঙালি গিজগিজ করছে - আমরা 'মাসিমার হোটেল' দেখে সেখানে থামলাম । এটা কলকাতার একটা সাধারণ ভাতের হোটেলের মতোই - ভাত মাছ মাংস ডিম ডাল তরকারি সবই পাওয়া যায় । এখানে সবার লাঞ্চ করতে খরচ পড়ল ৯৭০/- টাকা ।

ডেলো পার্ক
এরপর আমরা এগিয়ে গেলাম আমাদের শেষ গন্তব্য ডেলো-র দিকে (হ্যাঁ, এই সেই ডেলো !) । কালিম্পং শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা পাহাড়ের মাথায় একটা রিসর্ট আছে আর তার চারপাশটা নানারকমভাবে সাজানো হয়েছে । ডেলোয় ঢুকতে মাথাপিছু ১০/- টাকা করে টিকিট লাগে । আমরা এখানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ছবিটবি তুলে চলে এলাম । এখানে চাইলে প্যারা-গ্লাইডিং করা যেতে পারে । সাধারণভাবে ৩,০০০/- টাকা আর হাই-গ্লাইডিং এর জন্য ৫,০০০/- টাকা । আমরা কেউই করিনি তবে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছি ব্যাপারটা অনেকেই করে ।

এবার আমরা তাকদা ফেরার পথ ধরলাম । পাহাড়ে অন্ধকার খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে, কিছুক্ষণ গাড়ি চলার পরেই এমন অবস্থা হল যে হেডলাইট-এর আলোয় যেটুকু রাস্তা দেখা যাচ্ছে তার বাইরে আর কোথাও কিছু দৃশ্যমান নয় । একজায়গায় দাঁড়িয়ে চা খাওয়া হল । তারপর আবার চলা । অন্ধকারে পাহাড়ী পথে গাড়িতে চলার অভিজ্ঞতা বেশ সুন্দর । এর প্রধান কারণ হয়তো পাহাড়ে বেড়াতে গেলে রাতেরবেলা গাড়ি চড়ার সুযোগ কমই হয় । আমরা যখনই পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে সাইট-সিয়িং এ বেরোই, সাধারণতঃ সকাল সকাল বেরিয়ে বিকেল বা বড়জোর সন্ধ্যের মধ্যে হোটেলে ফিরে আসি । অন্ধকার হয়ে গেলে পাহাড়ে গাড়ি, লোকজন সবই কমে যায় আর সেইজন্যই হয়তো ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর লাগে । অন্ধকার রাস্তায় গাড়ি চলেছে, হেডলাইটের আলো রাস্তায়, রাস্তার ধারে পড়ছে আর সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে সামান্য গাড়ির ভেতরে ঢুকে গাড়ির ভেতরটাকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার হতে দিচ্ছে না - এই পরিবেশের যেন কোনও তুলনা হয় না । রাত্রির নিস্তব্ধতার একটা নিজস্ব সৌন্দর্য্য আছে আর সেটা এইসব সময়ে আরও বেশি করে বোঝা যায় । চলতে চলতে আমরা একটা পাশের পাহাড়ে অনেকটা ওপরদিকে একটা আলো জ্বলতে দেখলাম । আমাদের ড্রাইভার বলল সেটা 'স্যামড্রুপসে' । কালুক ভ্রমণের সময়ে আমরা এখানে গিয়েছিলাম ।

বাংলোয় ফিরলাম সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ । আবার আগেরদিনের মতোই - সন্ধ্যের পরে আর কিছু করার নেই । কিন্তু আমাদের বড় দল থাকায়, কিছু করার নেই বললেও অনেক কিছু করার থাকে । আবার আগেরদিনের মতোই ন'টার সময়ে ডিনার করে নিলাম । আমাদের কথা অনুযায়ী এরা ডিনারে চিলি-চিকেন রান্না করেছিল যদিও সেটা খুব ভালো কিছু হয়নি । এরা সাধারণভাবে এখানে চিকেন কারি রান্না করে আর সেটাই ভালো করতে পারে । অন্যরকম কিছু রান্না করতে বলার এক্সপেরিমেন্টটা এদের সঙ্গে না করাই ভালো !

তাকদায় সূর্য্যোদয়
পরেরদিন সকালে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম - পাঁচটার সময়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে লনে চলে এলাম । আকাশ এখনও অন্ধকার । সূর্য্যোদয় হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে । এই সময়ে বেশ ঠান্ডা লাগে । আমাদের বাংলোর পিছনে কয়েকধাপ সিঁড়ি দিয়ে উঠলে তাকদা মনাস্ট্রি - এখান থেকে সূর্য্যোদয়ের দৃশ্য আরও সুন্দর । আমরা ক্যামেরা নিয়ে সেখানে গিয়ে বসে রইলাম । এই সময়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাটাই একটা অভিজ্ঞতা - প্রতি মূহুর্তেই রঙ পাল্টাতে থাকে । পিছন দিকে তাকালে দেখা যায় দূরে একটা উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে ফ্লাশের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে । জেনেছিলাম ওটা দার্জিলিঙ এর টাইগার হিল ।

সূর্য্যোদয় হল । আমি লেখক নই - এই দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়ার মতো বিশেষণ আমার জানা নেই । শুধু এককথায় বলছি - অসাধারণ !

চা-বাগান
২৩শে অক্টোবর, ২০১৬ - রবিবার আমাদের তাকদার লোক্যাল সাইট-সিয়িং এর দিন । আগেই বলেছি তাকদায় দেখার সেরকম অনেক কিছু নেই, তাই আমরা বেরোলাম বেলা দশটা নাগাদ । এই যাওয়ার রাস্তাটা খুব সুন্দর । প্রথমে রাস্তাটা একটা পাইনফরেস্ট-এর মধ্যে দিয়ে চলল । কিছুক্ষণ চলার পর একটা অর্কিড গার্ডেন পড়ল । এখানে আমরা থামলাম না, ঠিক হল যদি ফেরার পথে সময় থাকে তাহলেই থামব । আরও এগিয়ে চলার পর শুরু হল রাস্তার দু'পাশের চা-বাগান । এখানকার 'রাংলি-রাংলিওট চা-বাগান' খুব বিখ্যাত । এই চা-বাগানের দৃশ্যও খুব সুন্দর - বিশেষ করে এরকম রাস্তার দু'পাশে চা-বাগান খুব বেশি দেখা যায় না । এই চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতেই পৌঁছে গেলাম আমাদের প্রথম স্টপেজ - 'তিস্তা ভ্যালি দূরবীন ভিউ পয়েন্ট'-এ ।

তিস্তা ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট থেকে তিস্তার ভিউ
প্রথমেই বলে রাখি এটাও একটা চা-বাগান । এই চা-বাগানের মধ্যেই একটা চাতাল মতো করা আছে - সেখানে দাঁড়িয়ে তিস্তা নদী আর তিস্তার ভ্যালি দেখা যায় । বেলা পৌনে বারোটা বাজে, আকাশে রোদের তেজও বেশ বেশী । কিন্তু এই ভিউ পয়েন্টে একটা চমৎকার ঠান্ডা হাওয়া দেয় যাতে খুব আরাম লাগছিল । এটা একটা ছবি তোলার জন্য আদর্শ জায়গা আর আমরা আমাদের সঙ্গে থাকা মোট পাঁচটা ক্যামেরার যথোপযুক্ত ব্যবহার করলাম । জায়গাটা এতটাই সুন্দর যে আমরা এখানে নির্ধারিত সময়ের অনেক বেশি সময় কাটিয়ে ফেললাম । কিন্তু তাতে আফশোসের কিছু নেই কারণ সব সুন্দর জায়গা কখনও দেখা হয়ে ওঠে না, তাই যেটা দেখছি সেটাকেই সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করার নামই জীবন । (কাব্য করে ফেললাম ! তবে এটাকে স্থানমাহাত্ম্য ছাড়া আর কিছু বলার নেই)

হ্যাঙ্গিং ব্রীজে যাওয়ার রাস্তা
এরপরের জায়গার নাম হল 'বারবাটে হ্যাঙ্গিং ব্রীজ' । তিস্তা ভ্যালি থেকে প্রায় একঘন্টা গাড়িতে যাওয়ার পর এখানে পৌঁছলাম । এখানে একটা শতবর্ষ পুরনো ঝুলন্ত সেতু আছে । একসময়ে এর ওপর দিয়ে জিপ চললেও এখন বাইক ছাড়া কোনও গাড়ি চলে না । আমাদের গাড়ি যেখানে আমাদের নামিয়ে দিল সেখান থেকে ঢালু পথে কিছুটা নেমে গেলে সেতুতে পৌঁছনো যায় । এই ঢালু পথটা বেশ ঢালু এবং চকচকে পাথর দিয়ে তৈরি । তাই চটি পরে এই রাস্তা দিয়ে না নামাই ভালো কারণ ফিরতি পথে ওঠার সময়ে অসুবিধে হতে পারে । তবে এই পথে না ফিরে অন্য একটা পথ দিয়েও ফেরা যায়, সেক্ষেত্রে একটা ঝর্ণার ওপর পাথরে পা দিয়ে ফিরতে হবে । দু'টোই কিছুটা কঠিন - সেইসঙ্গে থ্রিলিং-ও ।

বারবাটে হ্যাঙ্গিং ব্রীজ
আমাদের দলের কয়েকজন ব্রীজটা দেখতে গেলাম । হেঁটে পেরোতে বেশ ভালো লাগে - বিশেষ করে মাঝখানে পৌঁছে নিচের দিকে দেখতেও খুব ভালো লাগে । নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে একটা ঝর্ণা । বর্ষার পরে এই সময়ে পাহাড়ী ঝর্ণাগুলো বেশ পরিপুষ্ট থাকে তাই দেখতেও খুব ভালো লাগে । আমরা এখানে আবার অনেকটা সময় ব্যয় করলাম । ব্রীজটা পেরিয়ে একটা পায়ে চলা পথ আছে যেটা দিয়ে অন্য ফেরার পথটা ধরতে হয় । এখানে আমরা নিজেরাই আমাদের গাইড, যে পথে চলেছি আদৌ সেটা দিয়ে কোথাও পৌঁছনো যায় কিনা জানিনা কিন্তু ওই অজানার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলাই আনন্দের । ফেরার পথের একটাই সুবিধে যে কোনও চড়াই চড়তে হয় না, কিন্তু এক জায়গায় এসে ওই ঝর্ণাটা আবার পেরোতে হয় (এখানে একটা সিমেন্টের ব্রীজ তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সেটা এখনও অসম্পূর্ণ, তাই পায়ে হেঁটে ঝর্ণা পেরোনো ছাড়া উপায় নেই) । এখানে পাথরের ওপর পা দিয়ে ঝর্ণা পেরোলাম । কাজটা খুব সহজ নয় বিশেষ করে কোনও কারণে পা হড়কালে মৃত্যু না হলেও গুরুতর চোটের সম্ভাবনা । যাই হোক, কোনওরকম চোট না পেয়ে আমরা এপারে চলে এসে গাড়িতে উঠলাম ।

তাকদা চার্চ
দুপুর দু'টো বাজে - এখান থেকে বাংলোয় ফিরতে প্রায় একঘন্টা লাগবে তাই আমরা ফেরার পথে অর্কিড গার্ডেন দেখার ইচ্ছে ত্যাগ করলাম । বাংলোয় ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে নেওয়া হল । বিকেলে কিছু করার নেই, তাই আমাদের বাংলোর চারপাশটা হেঁটে ঘোরার প্ল্যান করলাম । বাংলো থেকে নিচে নেমে এসে একটা রাস্তা ধরে কিছুটা উঠলে একটা চার্চ দেখতে পাওয়া যায় । এটা আগে আরেকটা বাংলোই ছিল, পরবর্তীকালে একে চার্চে পরিণত করা হয়েছে ।

তাকদার বাড়িঘর
চার্চ থেকে আমরা আরও এগোতে থাকলাম । রাস্তাটা প্রকৃতপক্ষে আমাদের বাংলোকে ঘিরে পাহাড়ের গা দিয়ে একটা পায়ে চলা পথ । এখানে আরও কিছু লোকজনের বাড়ি ইত্যাদি রয়েছে । এইভাবে চলতে চলতে একসময়ে গ্রামটা শেষ হয়ে পথটা জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল । বিকেল শেষ হয়ে আসছে, এইসময়ে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করা বিভিন্ন কারণেই নিরাপদ নয়, তাই জঙ্গলের মধ্যে কিছুদূর গিয়ে আমরা ফেরার পথ ধরলাম । তবে এইটুকুর মধ্যেই যতটা ট্রেকিং করলাম সেটা মনে রাখার মতো । ফেরার পথটা তাকদা মনাস্ট্রির পাশ দিয়ে । ঘরে ফিরে গিয়ে সেরকম কিছু করার নেই, তাই আমি আর বৈশাখী এখানে কিছুক্ষণ বসে রইলাম । সূর্য্যাস্ত হয়ে গেছে, পাহাড়ের ওপরে ক্রমশঃ আলো কমে আসছে - এই সময়টা এখানে বসে থাকতে খুব ভালো লাগে । এরপর একেবারে অন্ধকার হয়ে গেলে আমরা বাংলোয় ফিরে এলাম ।

আমাদের বেড়ানো এখানেই প্রায় শেষ কারণ পরেরদিন আমরা ফেরার ট্রেন ধরব । তাকদায় শেষ রাত্রিটা একইরকম সুন্দরভাবে কাটল ।

পরেরদিন আবার সকাল সকাল উঠলাম সূর্য্যোদয় দেখব বলে । এবারে আর বিস্তারিত বিবরণ দিচ্ছি না কারণ সেটা প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি হয়ে যাবে । শুধু এ'টুকু বলছি আগেরদিনের থেকে আকাশ আরও বেশি পরিষ্কার থাকায় সূর্য্যোদয়টা আরও সুন্দর লাগল ।

পাইন ফরেস্টের রাস্তা
সাতটা নাগাদ আমরা তিনজন বেরোলাম হেঁটে পাইন ফরেস্ট দেখার জন্য । তাকদা জায়গাটা খুবই ছোট একটা গ্রাম - মিনিট দশেক হাঁটলেই গ্রাম শেষ হয়ে গিয়ে পাইনের জঙ্গল শুরু হয়ে যায় । আমরা যে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আগেরদিন সেই রাস্তা দিয়েই গাড়ি করে গেছি । হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিল । রাস্তার দু'পাশে ঘন পাইনের জঙ্গল আর গাছগুলোর মধ্যে দিয়ে সূর্য্যের আলো পড়ছে - এই দৃশ্য সত্যিই খুব সুন্দর । আমরা হেঁটে হেঁটে অর্কিড গার্ডেন পর্যন্ত্য গিয়ে আবার ফিরে এলাম ।

তাকদায় আর কিছু ঘোরার নেই - আমরা ব্রেকফাস্ট করে ব্যাগ প্যাক করে নিলাম । পাহাড় থেকে নামার সময়ে সবসময়েই হাতে সময় নিয়ে বেরোতে হয়, বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে সেভক রোডে ভীষণ জ্যাম হয় আর একবার সেই জ্যামে পড়লে ট্রেন ফেল হয়ে যেতে পারে । তাই আমরা বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম তাকদা থেকে । ঘন্টা দু'য়েক চলার পর লোহাপুল বলে একটা জায়গায় গাড়ি থামল লাঞ্চের জন্য । এখানে আমরা চিকেন মোমো, ভাত, এগ-কারী আর চিকেন দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম । খরচ পড়ল ১,০৫০/- টাকা ।

আবার গাড়ি এগিয়ে চলল । আমরা সেভকের জ্যাম না পেলেও রাস্তা বেশ খারাপ হওয়ায় নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছতে বিকেল সাড়ে চারটে বেজে গেল । স্টেশন থেকে আমরা ডিনারের মিক্সড চাউমিন আর চিলি চিকেন কিনে নিলাম । আমাদের ফেরার ট্রেন ছিল উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস যার স্টেশনে ঢোকার নির্ধারিত সময় বিকেল ৫:৪০ । ট্রেন ঢুকল প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট লেটে আর আমাদের শিয়ালদহে পৌঁছে দিল পরেরদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা । ভ্রমণ শেষ !

সারসংক্ষেপঃ

১. শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঘন্টাতিনেকের গাড়ির দূরত্বে একটা তুলনামূলক কম বিখ্যাত জায়গা তাকদা । এখানকার উচ্চতা ৫,৫০০ ফুট - ঠান্ডা মাঝারি ধরনের ।
২. স্টেশন থেকে তাকদা যাওয়ার জন্য গাড়ি পাওয়া সহজ নয়, তাই আগে থেকে বুক করে রাখাই ভাল । সুমো বা ওই জাতীয় বড় গাড়ির তাকদা যাওয়ার ভাড়া ৩,০০০/- টাকা ।
৩. তাকদায় থাকার জায়গা হল 'ব্রিটিশ হেরিটেজ বাংলো' (এর অন্য নাম 'সাইনো হেরিটেজ গেস্ট হাউস') । এদের ওয়েবসাইট http://heritagebungalows.com/takdah-british-bungalow-west-bengal/ থেকে এদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় । কলকাতা থেকে এদের বুকিং করার ফোন নম্বর ঃ (033)25299689, 8902232559 ।
৪. তাকদার ব্রিটিশ বাংলো একটা পাহাড়ের ওপরে । এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম ।
৫. ব্রিটিশ বাংলোয় সারাদিনের খাওয়াদাওয়ার জন্য মাথাপিছু প্রতিদিন ৬০০/- টাকা করে লাগে । এতে সকালে ব্রেকফাস্ট, দুপুরে লাঞ্চ, বিকেলে চা আর রাতের ডিনার পাওয়া যায় । এর বাইরে খাবার নিলে তার জন্য আলাদা চার্জ লাগে ।
৬. এখানকার খাবারের মান বেশ ভালো । এরা একেবারেই ঘরোয়া রান্না করে যার ফলে খেয়ে কখনও শরীর খারাপ করার সম্ভাবনা থাকে না ।
৭. বাংলোর ঠিক পিছনেই কয়েকধাপ সিঁড়ি দিয়ে উঠলে তাকদা মনাস্ট্রি । এখান থেকে সূর্য্যোদয় বা সূর্য্যাস্তের দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর । তবে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোনও ভিউ পাওয়া যায় না ।
৮. বাংলো থেকে পায়ে হাঁটা পথে মিনিটদশেক হাঁটলে পৌঁছনো যায় একটা চার্চে । এটা আগে একটা বাংলো ছিল -বর্তমানে চার্চে পরিণত করা হয়েছে ।
৯. বাংলোর পিছনে পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে ইচ্ছে করলে ট্রেকিং করা যায় । কিছুদূর এগোলে পাহাড়ী পথে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়া যায়, তবে সঠিক জুতো না পরে এখানে যাওয়া ঠিক হবে না ।
১০. বাংলো থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে পাইন ফরেস্ট আছে । এখানে দেখা যায় নানারকম নাম-না-জানা পাহাড়ী ফুলের গাছ যা দেখতে খুব ভালো লাগে ।
১১. তাকদার লোক্যাল সাইট সিয়িং-এর মধ্যে আছে 'অর্কিড গার্ডেন', 'রাংলি-রাংলিওট টি-গার্ডেন', 'তিস্তা ভ্যালি দূরবীন ভিউ পয়েন্ট', 'বারবাটে হ্যাঙ্গিং ব্রীজ' । এগুলোর কোনওটাই খুব বেশি দূরে নয়, তাই গাড়িতে হাফ-ডে ট্যুরেই ঘুরে আসা যায় । গাড়ি এরজন্য নেয় ২,০০০/- টাকা ।
১২. তাকদা থেকে সারাদিনের সাইট-সিয়িং এর জন্য কালিম্পং বা দার্জিলিঙ যাওয়া যেতে পারে । গাড়ি এরজন্য নেয় ৩,০০০/- টাকা ।
১৩. তাকদা থেকে কালিম্পং যাওয়ার পথে 'তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট', 'ছোটামাঙ্গয়া অরেঞ্জ গার্ডেন' দেখার মতো জায়গা । তাকদা থেকে কালিম্পং যেতে ঘন্টা দুয়েক লাগে ।
১৪. কালিম্পং শহরে একটা ক্যাকটাস গার্ডেন আছে যেটা দেখার মতো । এছাড়া কালিম্পং থেকে অনতিদূরে ডেলো পার্ক আছে যেখানে যাওয়া যেতে পারে ।

উপসংহারঃ

তাকদা
দার্জিলিঙ-কার্শিয়ং-কালিম্পং এর ভীড়ভাট্টা যাদের পছন্দ নয়, তাদের জন্য প্রায় একই দূরত্বে আরেকটা ঘোরার জায়গা - তাকদা । আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা - তাকদার সবকিছুই ভালো । ভালো থাকার জায়গা, ভালো খাওয়া, ভালো প্রাকৃতিক দৃশ্য, ভালো ঘোরা সবমিলিয়ে তাকদা অনবদ্য । এটা আসলে একটা ছোট গ্রাম, খুব বেশি লোকের বসতিও নেই । ট্যুরিস্টদের কেনাকাটা করার মতো সেরকম কোনও দোকান নেই আর তাই ট্যুরিস্টদের নিয়ে এখানকার মানুষের কোনও বাড়াবাড়িও নেই । আর এই বৈশিষ্ট্যই জায়গাটাকে আরও মনোরম করে তুলেছে । এখানে সূর্য্যোদয় আর সূর্য্যাস্ত দু'টোই ভীষণ সুন্দর হয় - যা খুব কম পাহাড়ী জায়গাতেই দেখা যায় । এখানে এসে যদি আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা নাও করা হয়, শুধুমাত্র দু'তিন দিন এখানে বসে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিতেও দারুণ লাগবে । একটা ছোট্ট পরিসরে ততধিক ছোট্ট একটা গ্রাম - কিন্তু সৌন্দর্য্যের দিক থেকে বিশালাকার । প্রকৃতি এখানে নিজেকে মেলে ধরেছে স্বমহিমায় আর সেই জন্যই কৃত্রিমতার ছাপ খুব কম । তাই এইরকম জায়গা এবং পরিবেশ যাদের পছন্দ, তাকদায় একবার ঘুরে আসাটা তাদের জন্য একটা লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স - এটা বলা যেতেই পারে !

তাকদা ভ্রমণের আরও ছবি দেখতে হলে click here.